About Padakshep – The Step

পদক্ষেপের আতুর ঘর এর কথা
সম্পাদক – 
আশীষ বসাক ও শুভজিৎ দত্তগুপ্ত

প্রায় তিন বছর বিরতিরপর আবার নতুন করে “পদক্ষেপ “শুরুহলো, যদিও মাঝে কবি কৃষ্ণা বসুর দেওয়া উৎসাহে ও সুদীপ্তা রায় চৌধুরীর প্রচেষ্টায় কয়েকটা সংখ্যা বের হয়েছিল বিক্ষিপ্ত ভাবে ।তার পরবর্তী কালের দীর্ঘ বিরতির মাঝে যখন পদক্ষেপের কথা আমরাও ভুলতে বসেছিলাম তখন হ্যালো কলকাতার আশীষ বসাক এর উৎসাহ, প্রচেষ্টা নবজন্মদিলো পদক্ষেপ কে।যদিও নাম একটু পরিবর্তন হলো পদক্ষেপ এখন থেকে পদক্ষেপ The Steps. এই পর্যায়ে অনলাইন এর দিকেই বেশী নজর দেবো আমরা পাশাপাশি থাকবে পুরোনো নিয়মের পত্রিকার ছাপা সংখ্যার প্রকাশ। নবপর্যায়ের এই প্রথম সংখ্যাতে লিখতে বসে চোখের সামনে যেন বারবার স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে পুরোনো অনেক স্মৃতি ,যখন প্রথম “পদক্ষেপ ” আত্মপ্রকাশ করে We are The Common People এর সদস্যদের হাত ধরে।
অগোছালো ঢিলেঢালা একটা টিমের প্রচেষ্টায় জন্ম নিয়েছিল “পদক্ষেপ “,আমরা যারা পত্রিকাটা বের করেছিলাম তাদের আগে পত্রিকা বের করবার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিলোনা। তবুও অনেক প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক -কবি -চিত্রশিল্পী আমাদের এই ক্ষুদ্রপ্রয়াসে আমাদের পাশে থেকে আমাদের উৎসাহিত করেছিলেন ,সবে জন্ম নেওয়া এক অনামী পত্রিকায় লিখেওছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আজ নেই। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কে আগেই হারিয়েছিলাম আমরা ২৮ শে জুলাই চলেগেলেন মহাশ্বেতা দেবী। এই দুজনের চলে যাওয়ায়ে অপূরণীয় ক্ষতি হলো বাংলা সাহিত্য জগতের। যাই হোক জীবনে ক্ষতি ও ক্ষত কে স্বীকার করে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয় , তবে খ্যাতির চূড়ান্ত শিখরে থেকেও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং মহাশ্বেতা দেবী যেভাবে নতুনদের প্রয়াসে উৎসাহ দেখাতেন সেটা সত্যিই বিরল দৃষ্টান্ত,যার অভাব নতুনরা চিরকাল অনুভব করবে । আর একজনের কথা উল্লেখ করতেই হয় যিনি সবসময় সাহিত্যকেন্দ্রিক প্রয়াসকে উৎসাহিত করেন ,পাশে থাকেন সর্বতো ভাবে ,কৃষ্ণা দি ,কবি কৃষ্ণাবসু।

পদক্ষেপের এই পুনর্জন্ম আমরা উৎসর্গ করলাম মহাশ্বেতা দেবী কে।তাঁর মতন মহান সাহিত্যিকের সমর্থন পেয়ে ধন্য হয়েছিল পদক্ষেপ ,নতুন ভাবে শুরু করবার সময় তাঁকে এই প্রয়াস টি উৎসর্গ করে ধন্য হলো আমাদের নতুন করে পথচলার প্রচেষ্টা।

সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর সাথে পরিচয় হওয়ার আগে সমাজকর্মী মহাশ্বেতা দেবীর সাথে পরিচয় হয়েছিল আমাদের কলকাতা প্রেসক্লাবে। ইরম শর্মিলার আফস্পা বিরোধী অনশন আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর ভাই ইরম সিংজিৎ এর হাতে কোভালাম পুরস্কার তুলে দিতে এসেছিলেন তিনি। পরিচয় করিয়েদিলেন সিংজিৎ ই(এর আগে দুএকটি অনুষ্ঠানে ওনাকে দেখলেও ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় ছিল না )। এতদিন যার লেখা পড়েছি ,যাকে দূরদর্শনে বা খবরের কাগজের পাতায় দেখেছি ,মনে করেছি অনেক দূরের কোনো একজন মানুষ ,প্রথম পরিচয়েই আপন করে নিলেন তিনি ,উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত করলেন আফস্পা বিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ,অত্যন্ত সংকোচের সাথে পদক্ষেপের্ কথা বলতেই বললেন ,উনি নিজে বার্ধক্য জনিত কারণে লিখতে না পারলেও উনি বলবেন আমাদের পত্রিকা টিমের কেউ যেন সেটা লিখে নেওয়ার দায়িত্ব নেয় ,সাদর আমন্ত্রণ জানালেন নিজের বাড়িতে। ওই সভাস্থলে উপস্থিত থাকা মেহের দা ,বিজ্ঞানী মেহের আলী ইঞ্জিনিয়ার কে বললেন উনি যেন আমাদের সাথে করে নিয়ে যান ,তাহলে বাড়ী চিনতে অসুবিধা হবেনা।

তখন রুবী র কাছে কসবার বাড়ী তে থাকতেন মহাশ্বেতা দেবী,আশ্চর্য এক লেখিকা ,যিনি লেখার জন্য বেছে নিয়েছিলেন একাকী জীবন ,ছেড়ে এসেছিলেন স্বামী -পুত্র -সংসার। তবে সামাজিক আন্দোলন থেকে কোনোদিন দূরে সরে থাকেননি তিনি। তা সে শবর খেড়িয়াদের সামাজিক স্বীকৃতি -উন্নয়নের আন্দোলন ই হউক অথবা ইরম শর্মিলার আফস্পা বিরোধী অনশন আন্দোলন সমস্ত কিছুর সাথেই থেকেছেন সরাসরি -সক্রিয় ভাবে।শবর জনজাতির মানুষের কাছে তিনি ছিলেন “মা ” ,ম্যাগসেসে পুরস্কারের ১০ লক্ষ টাকা তিনি তুলে দিয়েছিলেন নিজের শবর সন্তানদের উন্নয়নের জন্য।

মহাশ্বেতা দেবীর সাথে আমাদের দ্বিতীয় তথা শেষ আলাপচারিতা তাঁর বাড়ীতেই ,নিয়ে গিয়েছিলেন মেহেরদা। প্রায় তিন ঘন্টা সময় দিলেন তিনি। ওনার সাথে লেখা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সমাজ -রাজনীতি -আন্দোলন নানা বিষয়নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলো। উনি খুব মনদিয়ে আমাদের কথা শুনলেন ,ওনার অভিজ্ঞতা -মতামত জানালেন ,অসুস্থ শরীরেও সামান্যতম অধৌর্য প্রকাশ পায়নি। ঘর এ ঢুকেই যে টেবিলটার সামনে উনি বসতেন তাতেই রাখাছিল ল্যান্ড লাইন এর ফোন (শারীরিক কারণে মোবাইল ব্যবহার করতেননা মহাশ্বেতা দেবী)আলোচনার সময় ল্যান্ড লাইন বেজে উঠতেই উনি সেটা নামিয়ে রেখে দিলেন। মহাশ্বেতা দেবীর সাথে আলাপচারিতার মধ্যদিয়ে উঠেআসা লেখা পদক্ষেপ ছেপেছিলো তার পরবর্তী সংখ্যাতে। যদিও সেটা তাঁর কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি আমরা। দেখা করতে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে ,একজন নার্স নেমে এসে জানিয়েছে শারীরিক কারণে দেখা করাযাবেনা। যদিও পরে মহাশ্বেতা দেবী মিডিয়া কে জানিয়েছিলেন ওই সময়টা তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিলো ,যেখান থেকে তাঁর নাতি এসে তাঁকে নিয়ে যায়। প্রকৃত ঘটনা কী সেটা আর জানা সম্ভব হয়নি কসবার বাড়ী ছাড়বার পর মহাশ্বেতা দেবীর নতুন ঠিকানা আমাদের অজানাছিল ,আর তারপর থেকে শারীরিক কারণেই অন্য কোনো অনুষ্ঠানেও তিনি আসতেন না ,তাই আর দেখাই হয়নি কোনোদিন। তবে তাঁর সাথে আমাদের শেষ আলাপচারিতাতে অনেক বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল তার বেশীর ভাগটাই পদক্ষেপের প্রকাশিত লেখাটার জন্য ছিল অপ্রাসঙ্গিক ,তাই ইচ্ছা ছিলো পরে এইসমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে লিখবো ,সেটা আর হয়ে ওঠেনি। আর আজ এতদিনবাদে সেগুলিকে মনে করে লিখতে হলে তাতে তথ্যের বিকৃতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে ,তাই সেই চেষ্টা থেকে বিরত রইলাম।তবে মহাশ্বেতা দেবীর সাথে পরিচয় হওয়ার আগে ও পরে দেখেছি চূড়ান্ত ভাবে সময়ানুবর্তীতা মেনেচলতে ,যেসময় নির্ধারিত থাকতো কর্মসূচীর জন্য ঠিক সেইসময়ে তাঁকে পোঁছাতে দেখেছি আমি ,কোনোদিন পাঁচ মিনিট দেরী ও হয়নি। শুধু আমরা যেদিন তারবাড়িতে গেছিলাম সেদিন দুপুর প্রায় দুটো তিরিশ বেজে যাওয়ার পর আলোচনা যখন চলছে মহাশ্বেতা দেবীর সাথে সর্বক্ষণ থেকে যিনি তাঁর দেখাশোনা করতেন সম্ভবত তার নাম রাধারানী,আমাকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়েগিয়ে সংকোচের সাথে বললেন মা এখনো ইন্সুলিন নেননি ,এর পর খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন ,আমাদের আসলে এটা খেয়াল ই ছিলোনা ,তৎক্ষণাৎ বাকীদের ডেকে নিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম মহাশ্বেতা দেবী কিন্তু তখনো আলোচনায় উৎসাহী ছিলেন।

ছোট করে লিখতে বসেও অনেক টা বড় হয়েগেলো লেখার আকার ,আসলে আমিও প্রায় ৩ বছর বাদে লিখতে বসলাম। তবে সেদিন শবর দের আর্থ -সামাজিক’ অবস্থার কথা বলতেগিয়ে একটা ঘটনার কথা বলেছিলেন মহাশ্বেতা দেবীর ,একজন সমাজকর্মী হিসাবে সেটা বলবার লোভ সামলাতে পারলামনা ,মহাশ্বেতা দেবীকে সন্মান জানাতে একবার উৎসব এ মেতেছিলো শবর রা ,খাওয়া দi ওয়ার বন্দোবস্ত করেছে তারা ,মহাশ্বেতা দেবী আমন্ত্রিত হয়েগেছেন ,খেতেবসে সবারপাতে গরম ভাত দেওয়া হয়েছে। মহাশ্বেতা দেবী অপেক্ষা করছিলেন ভাতের সাথে অন্য কিছুর জন্য যা দিয়ে ভাত খাওয়া যায় শবর রা কিন্তু ভাত খেতে শুরু করে দিয়েছে। মহাশ্বেতা দেবী কে একজন শবর জিজ্ঞেস করলো উনি খাওয়া শুরু করছেন না কেন ?মহাশ্বেতা দেবী বলেছিলেন কি দিয়ে খাবো ?উত্তর এসেছিলো ভুখ দিয়ে খা। লেখা টা কে আর দীর্ঘ করবোনা। মহাশ্বেতা দেবী সকলের মনে অমলিন থাকবেন যুগ যুগ ব্যাপী। পদক্ষেপ শ্রদ্ধার সাথে চিরকাল স্মরণ করবে তাঁকে।

পরিশেষে ,শুধু এটুকু বলবো পদক্ষেপ এর জন্ম ই হয়েছিলো আদর্শগত ভাবে পত্রিকার প্রতিটি স্তরে নতুন প্রজন্মকে স্থান করে দেওয়ার জন্য ,শুধুমাত্র লেখা নয় পত্রিকা পরিচালনার অন্য দিকগুলিতেও,নতুন ভাবে যখনআমরা শুরু করছি তখনও এই ভাবনার ব্যাতিক্রম হবে না। পদক্ষেপের এই ভস্ম থেকেবার বার ফিনিক্স পাখির মতো বেঁচে ওঠার পেছনে যে শক্তি টির অবদান সবচেয়ে বেশী সেটি হলো পাঠকদের ভালোবাসা। পাঠকদের কাছে অনুরোধ পদক্ষেপের্ সাথে আরো বেশী করে সম্পৃক্ত হোন। এই পত্রিকার সাফল্য আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *