Short Story by Mou Chatterjee Bhattacharyya – ILF Member

 

অশরীরীর প্রেম
      -মৌ চ্যাটার্জী ভট্টাচার্য্য

উফফ আজ অফিস থেকে বেরোতে বড্ডো দেরি হয়ে গেলো। বাড়িতে রুমি একা আছে, নিশ্চয়ই রাগ করে ঠোঁট ফোলাচ্ছে।
-‘রঘুদা, একটু তাড়াতাড়ি চালাও, আর শোনো, কোনো ফুলের দোকান পেলে দাঁড়িও।’

ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়ে সিটে গা এলিয়ে দিলো অঙ্কিত, মনে মনে ভাবলো, ফুল দিয়ে রাগ ভাঙাবে বধূর। চোখের সামনে ভেসে উঠলো রুমির দুষ্ট-মিষ্টি মুখটা– টানা টানা কাজলকালো দুটি চোখে দীর্ঘ আঁখিপল্লব, টিকলো নাকে ঝলমলে ছোট্ট হীরের নাকছাবি, দুগালে মিষ্টি দুটো টোল,গোলাপী ঠোঁটে ছোট্ট একটা তিল আর নিটোল পানপাতার মতো চিবুক।

মাত্র দুমাস হলো বিয়ে হয়েছে ওর আর রুমির। সম্বন্ধ করে বিয়ে। এখনো বিয়ের গন্ধ যায় নি গা থেকে! নতুন ব‌উয়ের নূপুরের আওয়াজ, অনভ্যস্ত হাতের কপালে মাখামাখি সিঁদুর, লজ্জানত দৃষ্টি…সব‌ই বড়ো মিষ্টি লাগে অঙ্কিতের।

বিয়ের ঠিক আগেই ওর একটা বড়োসড়ো প্রমোশন হয়েছে, কিন্তু পোস্টিং ঝিমলীগঞ্জে। প্রথম শুনেই অঙ্কিতের মা তো মন খারাপ করে কেঁদে কেটে একসা…
– ‘নতুন বৌমা এখনো তেমন কিছু জানে না, পারবে কি ওখানে গিয়ে রান্নাবান্না সব করতে? হাত টাত না পুড়িয়ে ফেলে ! আমার তো বাড়ি ছেড়ে যাবার জো নেই যে তোদের ঘর দোর একটু গুছিয়ে দিয়ে আসবো।’

-“অতো চিন্তা কোরো না মা, আমি অফিস থেকে সবরকম সুযোগ সুবিধা পাবো। ঠিক ব্যবস্হা একটা হয়ে যাবে।”

হানিমুন সেরে ছুটি কাটিয়ে এই একসপ্তাহ হলো অঙ্কিত আর রুমি ঝিমলীগঞ্জ এসেছে। অফিসার বাংলোটা দারুন সুন্দর–নির্জন, নিরিবিলি। নতুন দম্পতিদের পক্ষে একদম আদর্শ।
ঘরদোর গুছিয়ে এই কদিন দুজনে পায়ে হেঁটে আশপাশটা ঘুরে দেখে নিয়েছে ভালো করে। ভারী মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সকাল বিকেল কাছেই একটা বাজার বসে। সেখানে টাটকা শাকসবজি, পুকুরের মাছ সব‌ই মেলে। সকালের বাজারটা দুজনে একসাথে মিলেই সারে। খুব ভালো লাগে রুমির রঙ-বেরঙ এর শাকসবজি নাড়াচাড়া করতে।

আজই অফিসের কাজে যোগ দিয়েছে অঙ্কিত। তাই কাজ বুঝে নিতে একটু সময় লাগলো। সকাল থেকে রুমিকে একটা ফোন করারও অবকাশ পায় নি। তাছাড়া ওর ফোনটা কি হয়েছে কে জানে, চার্জ চলে যাচ্ছে খালি, কাল একবার দোকানে দেখতে হবে।

এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই বাংলোর সামনে এসে পড়লো ওদের গাড়িটা..অবাক হয়ে দেখলো পুরো বাংলোটা অন্ধকার, যেন কোনো ভুতুড়ে বাড়ি… ঠিক যা ভেবেছে তাই, ম্যাডাম নিশ্চয়ই খুব রাগ করেছে। ফুলের গোছাটা হাতে নিয়ে রঘুদাকে গাড়ি পার্ক করতে বলে নিজের চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে এলো অঙ্কিত।

-‘রুমি ! এই সোনা, কই তুমি !” নাহ কোনো সাড়া নেই।
ড্রইং রুমের বাতিগুলো জ্বেলে দিয়ে  সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলো তখনও রুমির কোনো পাত্তা নেই। এবারএকটু বিরক্তির রেখা দেখা দিলো মুখে,
-‘ উফফ, মেয়েদের মন ! এতোও অবুঝ হলে সামলানো মুশকিল।’

রুমির কথাই ভাবতে ভাবতে ফুলটা হাতে নিয়ে বেডরুমের সামনে এসে দাঁড়ালো অঙ্কিত।
-‘হুম যা ভেবেছে ঠিক তাই। দরজাটা ভেজানো ! তার মানে মেমসাহেব ভেতরে!’..ছেলেমানুষি দেখে নিজেরই হাসি পেলো অঙ্কনের।

-‘রুমি, ওই সোনা!’, বলতে বলতে দরজা খোলে ও।
হালকা আলোয় জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ানো রুমিকে দেখতে পায় ! ওই অদ্ভুত নীলচে আলোয় ওর ফর্সা উন্মুক্ত পিঠ আর সুডৌল কোমর চোখে পরে। পিছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে বলে,’এই দুষ্টু, কখন থেকে ডাকছি না তোমায়।”

-ওর বুকে মুখ গুঁজে দিতে দিতে খিলখিল করে হেসে ওঠে রুমি,’দেখছিলাম ছুঁতে পারো কিনা’….

-‘তবে রে ! দাঁড়াও দেখাচ্ছি ছুঁয়ে দিতে পারি কিনা।’, দুহাতে কোলে তুলে নেয় রুমির ছোট শরীরটা তারপর বিছানায় আলতো করে ছুঁড়ে দেয়।
রুমি কিছুতেই ধরা দিতে চায় না আর অঙ্কিত ধরবেই, খেলা চলে দুজনের, সাথে খিলখিল হাসি।
একসময় আত্মসমর্পণ করে দুজনেই দুজনের কাছে। অনাবিল আবেশে ভেসে যায় দুজন।

কতক্ষন এইভাবে কেটে গেছে কে জানে… অঙ্কিতের ঘুম ভাঙলো কলিং বেলের আওয়াজে। ঘড়ি দেখলো, রাত ১০ টা !
ওরে বাবা, এত রাতে আবার কে? বিছানায় রুমিকে দেখতে পেলো না…. হয়তো রান্না ঘরে ডিনার বানাচ্ছে।
চটিটা পায়ে গলিয়ে দরজা খুলতেই কলকলিয়ে ঘরে ঢুকে এলো রুমি, -‘তুমি কখন ফিরলে গো। আমি অনেকবার তোমায় ফোন করতে চেষ্টা করেছি কিন্তু সুইচড অফ বলছিলো। আসলে আমাদের ৪টে বাড়ি পরে যে কাকিমা থাকে ওনার নাতিটা হঠাৎ জ্বর বাঁধিয়ে কেলেঙ্কারি। ওনার সাথে হাসপাতাল গেছিলাম। উফফ বড্ডো দেরি হয়ে গেলো গো।”…
অঙ্কিত দেখলো ওই বাড়ির কাকাবাবুও দাঁড়িয়ে আছেন, রুমিকে পৌঁছে দিতে এসেছেন।

কোনো কথা বলতে পারলো না ও! কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাবতে লাগলো…রুমি তো বাড়ি ছিল না তবে সে কে ছিল? ঘরের দরজা তো বন্ধ ছিল, তবে সে গেলো কিভাবে!
কিছুই মাথায় ঢুকছিল না ওর। ধীরপায়ে বেডরুমে এলো, ফুলের তোড়াটা সুন্দর ভাবে টেবিলে সাজানো ! শুধু একটা টকটকে লাল গোলাপ রাখা বিছানায়!
সেদিন রাতে ‘ঘুম পেয়েছে’ বলে রুমিকে এড়িয়ে গেলো অঙ্কিত।

পরদিন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে পাশের বাড়ির নিতুবাবুর সাথে দেখা ,’মশাই ও বাড়ি ছেড়ে দিন বাড়িটা ভালো না। সত্যি মিথ্যে জানি না তবে ১০ বছর আগে এক নববিবাহিত স্ত্রী খুন হয়, তারপর থেকে নতুন দম্পতি দেখলেই নাকি তাকে দেখা যায়। আপনারও তো মশাই বিয়ের গন্ধ যায় নি গা থেকে,’ বলেই হাহা করে হেসে উঠলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *